আপডেটের সময়ঃ জুলাই ২, ২০২৪
পাহাড় নিউজ ডেস্ক:
দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে গত কয়েকদিন ধরে ভারী ও মাঝারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হলে বাড়ে পাহাড় ধসের শঙ্কা। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও পাহাড়ের পাদদেশে দিনদিন বাড়ছে বসতির সংখ্যা।
স্থানীয় প্রশাসন গত কয়েকদিন ধরে মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ন স্থানগুলো থেকে লোকজনদের সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জন্য প্রশাসন পুরো জেলায় ২৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে। সড়ক ধস রোধ মোকাবিলা, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখা, স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রাখা, বন্যা কবলিত এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে খাবার সংগ্রহ করার ব্যবস্থা আগেই প্রস্তুতি সেরেছে প্রশাসন। তবে আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে কোন মানুষ আশ্রয় নিতে দেখা যায়নি।
এদিকে,সোমবার বিকেলে সরজমিনে দেখা গেছে, রাঙামাটি শহরের শিমুলতলী এলাকা, রুপনগর এলাকা, লোকনাথ মন্দির এলাকা,নতুন পাড়া এলাকায় ভারী বৃষ্টিতেও ঝুকির্পণ এলাকাগুলোতে বসবাস করছে হাজারো মানুষ। মানুষের মাঝে কোন ধরনের ভয় ভীতি নেই। নিজের জীবনের চেয়েও তারা তাদের বাড়ি-ঘর গবাদি পশু নিয়ে বেশ চিন্তিত।
এদিকে, রোববার থেকে ভারী বর্ষণে জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় কাচালং নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেকোন সময় নিম্ন এলাকাগুলো পানিতে প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। এইজন্য ওই এলাকার মানুষদের দ্রুত সময়ে সরে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাঘাইছড়ি উপজেলা নিবাহী অফিসার শিরিন আক্তার। তিনি বলেন, বাঘাইছড়ি উপজেলায় ৫৫ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
রাঙামাটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো হুমায়ুন কবির বলেন, , রোববার (৩০ জুন) সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরের ২৯ টি এলাকাকে ঝুকিঁপূর্ণ ঘোষনা করা হয়েছে। রাঙামাটি পৌর এলাকায় ২৩ টি ও সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৫৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে, রাঙামাটি শহরের রুপনগর এলাকার সমাজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাকিব হোসেন বলেন, ভারী বর্ণের কারনে জেলা প্রশাসন থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি এলাকাবাসীদের আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য।
এদিকে, শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা মো: শামীম বলেন, সরকার যদি আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার পর আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করে তাহলে অবশ্যই যাবো। সবাইতো জীবনের নিরাপত্তা চায়। তিনি বলেন, আমরা এখানে ঝুকিঁর উপরে আছি ,কি করবো এখন নিরুপায়।
শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা ও মাদ্রাসা পাড়ার সভাপতি মো: সোহেল বলেন, আজকে সকালে রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী ও পৌর ওয়াড কাউন্সিলর রবি মোহন চাকমাসহ আমাদের এলাকায় এসে লোকজনদের বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্রে ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে গেছেন। আমরা চেষ্টা করবো সবাইকে সন্ধ্যার মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য। তিনি বলেন, এখানে বেশিরভাগ লোক আশ্রয় কেন্দ্রে না যাওয়ার কারনে হচ্ছে রাতের বেলায় ঘরের জিনিষপত্র চুরি হয়ে যায় এর পাশাপাশি খাওয়ার সমস্যাও হয় তাই অনেক যেতে চাই না।
শহরের ভেদভেদীর লোকনাথ মন্দির এলাকার গাড়ী চালক মো: আবুল বশর বলেন, আমারটা নতুন ঘর ,আমি মনে করছি আমি এখনও নিরাপদে আছি।
লোকনাথ মন্দির এলাকার আবুল কালাম বলেন, বৃষ্টি হলে ঝুকিঁও আছে ভয়ও থাকে। যারা বেশি ঝুকিঁতে আছে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যায়। তিনি বলেন, প্রশাসন এবং এলাকার লোকজনও বলছেন আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য । এখনও পরিস্থিতি ভালো দেখতেছি তাই যাচ্ছি না ।
এদিকে, রাঙামাটি পৌরসভার ৬ নং ওয়াড কাউন্সিলর রবি মোহন চাকমা বলেন, আমরা পৌরসভার মেয়রসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন ঝুকির্পন এলাকায় বারবার গিয়ে লোকজনদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, প্রশাসন থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বলেন, প্রাণহানী এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের সরিয়ে আনতে আমরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় কার্যক্রম পরিচালনা করছি। উপজেলা পর্যায়গুলোতে একই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আমরা স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে টিম গঠন করেছি। যেকোন দুর্যোগ মোকবিলায় আমরা একসাথে কাজ করবো।
জানা যায়, জেলায় ২০১৭সালে পাহাড় ধসে সরকারি হিসেবে ১২০ জন এবং ২০১৮ সালে ১১ জনের মৃত্যু হয় পাহাড় ধসে ।